ঢাকা,রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ২০ হাজার একর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইউরিয়া সার সংকটের আশংকাকে মাথায় নিয়ে কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছে। চাহিদার তুলনায় আরও কম সার বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে কৃষকরা। এরপরও থেমে নেই কৃষকরা। শীতের আগমনের শুরুতেই সবজি চাষে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। প্রতিবছর বর্ষাকালে বুকচিরে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদী হয়ে উজানের পাহাড় থেকে বিপুল পরিমাণ পলি মাটি নামে। আর নদীর তীরবর্তী এলাকায় এসব পলি জমে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।

অবশ্য ইতোপুর্বে এসব উর্বর জমির অধিকাংশে তামাক চাষ হতো। এখন সেই তামাক চাষিরা ঝুঁকছেন সবজি চাষে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় কৃষকেরা ক্রমান্বয়ে পরিবেশ বিধংসী তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে বিভিন্ন রকমের রবিশস্য ফলনে উৎসাহি হয়ে উঠেছেন।

মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত কিংবা মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার তান্ডব দেখেনি কৃষকেরা। আবহাওয়া বেশ ভালো। একারণে স্থানীয় কৃষকেরা গেল অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এবার শীতকালীন আগাম রকমারি সবজি চাষে নেমেছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর মোট ৮ হাজার হেক্টর (২০ হাজার একর) জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকেই চোখ যায় দেখা মিলবে সবুজের নতুন প্রতিচ্ছবি।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা (উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এবছর স্থানীয় কৃষকেরা অন্যবছরের তুলনায় আগেভাগে শীতকালীন সবজি চাষে নেমেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের হিসেব অনুযায়ী এবছর উপজেলায় মোট ৮ হাজার হেক্টর (২০ হাজার একর) জমিতে রকমারি সবজি চাষ শুরু হয়েছে। তদমধ্যে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে হচ্ছে শীতকালীন সবজি বেগুন, মরিচ, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, ধনিয়াপাতা, গোল আলু, মিস্টি আলু, বরবটি, সীম, ঢেড়শ, লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ। পাশাপাশি একই সময়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ২০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ৩০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন জনপদে আমন ধান কর্তন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে কৃষকেরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নেমে পড়েছেন। এখন কৃষকেরা মাঠ তৈরীতে পুরোদমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এখন কৃষকের প্রয়োজন চাষের বিপরীতে চাহিদা মোতাবেক ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার, কীটনাশক এবং নিরবিচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা। আশাকরি দুর্ভোগমুক্ত চাষবাদ নিশ্চিত করণে বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন কার্যকরি ভুমিকা পালন করবে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মকছুদুল হক ছুট্টু বলেন, উপজেলার সবধরণের চাষের প্রয়োজনে চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রনালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। একইভাবে চাহিদাপত্রে অক্টোবর মাসের জন্য ১১৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া চেয়ে থাকলেও কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২৯০ মেট্রিক টন কম।

তিনি বলেন, এখন শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। তাই নিরবিচ্ছিন্ন চাষের জন্য পর্যাপ্ত ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া জরুরী। সেখানে চাহিদার বিপরীতে এভাবে বরাদ্দ কম দেওয়া হলে তো কৃষকরা সার নিয়ে চরম সংকটে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক মো.কবির হোসেন বলেন, বার্ষিক প্রতিবেদনে চাহিদা পাঠালেও এখন যে পরিমাণ ইউরিয়া সার চকরিয়া উপজেলার জন্য দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে চাষাবাদ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন সবজির কথা বলে তামাক ক্ষেতে সরকারি বরাদ্দের সারগুলো যাচ্ছে কি না তাও দেখতে হবে। কারণ চকরিয়ার আগে এইধরণের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতা আমাদের কাছে অভিযোগও করেছেন।

পাঠকের মতামত: